-->

29 April 2013

আযান ও তার ফজীলত

শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
আযান ( الأذان)
সংজ্ঞা : ‘আযান’ অর্থ, ঘোষণা ধ্বনি (الإعلام)। পারিভাষিক অর্থ, শরী‘আত নির্ধারিত আরবী বাক্য সমূহের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ে উচ্চকণ্ঠে ছালাতে আহবান করাকে ‘আযান’ বলা হয়। ১ম হিজরী সনে আযানের প্রচলন হয়। [মির‘আত ২/৩৪৪-৩৪৫, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘আযান’ অনুচ্ছেদ-৪।]

সূচনা : ওমর ফারূক (রাঃ) সহ একদল ছাহাবী একই রাতে আযানের একই স্বপ্ন দেখেন ও পরদিন সকালে ‘অহি’ দ্বারা প্রত্যাদিষ্ট হ’লে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তা সত্যায়ন করেন এবং বেলাল (রাঃ)-কে সেই মর্মে ‘আযান’ দিতে বলেন। [আবুদাঊদ হা/৪৯৯, ‘আওনুল মা‘বূদ হা/৪৯৪-৪৯৫, ২/১৬৫-৭৫; আবুদাঊদ, দারেমী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৬৫০।]

ছাহাবী আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ (রাঃ) সর্বপ্রথম পূর্বরাতে স্বপ্নে দেখা আযানের কালেমা সমূহ সকালে এসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকটে বর্ণনা করেন। পরে বেলালের কণ্ঠে একই আযান ধ্বনি শুনে হযরত ওমর (রাঃ) বাড়ী থেকে বেরিয়ে চাদর ঘেঁষতে ঘেঁষতে ছুটে এসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলেন, ‘যিনি আপনাকে ‘সত্য’ সহকারে প্রেরণ করেছেন, তাঁর কসম করে বলছি আমিও অনুরূপ স্বপ্ন দেখেছি’। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ‘ফালিল্লা-হিল হাম্দ’ বলে আল্লাহর প্রশংসা করেন’।[আবুদাঊদ, (আওনুল মা‘বূদ সহ) হা/৪৯৫; মিশকাত হা/৬৫০।] একটি বর্ণনা মতে ঐ রাতে ১১ জন ছাহাবী একই আযানের স্বপ্ন দেখেন’। [মিরক্বাত শরহ মিশকাত ‘আযান’ অনুচ্ছেদ ২/১৪৯ পৃঃ।] উল্লেখ্য যে, ওমর ফারূক (রাঃ) ২০ দিন পূর্বে উক্ত স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ আগেই বলেছে দেখে লজ্জায় তিনি নিজের কথা প্রকাশ করেননি।[আবুদাঊদ (আওনুল মা‘বূদ সহ) হা/৪৯৪ ‘আযানের সূচনা’ অনুচ্ছেদ।]

আযানের ফযীলত ( فضل الأذان) :

(১) আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,

لاَ يَسْمَعُ مَدَى صَوْتِ الْمُؤَذِّنِ جِنٌّ وَّلاَ إِنْسٌ وَّ لاَ شَيْئٌ إِلاَّ شَهِدَ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ رواه البخاريُّ-

‘মুওয়ায্যিনের আযানের ধ্বনি জিন ও ইনসান সহ যত প্রাণী শুনবে, ক্বিয়ামতের দিন সকলে তার জন্য সাক্ষ্য প্রদান করবে’। [বুখারী, মিশকাত হা/৬৫৬ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘আযানের ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-৫]

(২) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন যে, ‘ক্বিয়ামতের দিন মুওয়ায্যিনের গর্দান সবচেয়ে উঁচু হবে’। [মুসলিম, মিশকাত হা/৬৫৪।]

(৩) মুওয়ায্যিনের আযান ধ্বনির শেষ সীমা পর্যন্ত সজীব ও নির্জীব সকল বস্ত্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে ও সাক্ষ্য প্রদান করে। ঐ আযান শুনে যে ব্যক্তি ছালাতে যোগ দিবে, সে ২৫ ছালাতের সমপরিমাণ নেকী পাবে। মুওয়ায্যিনও উক্ত মুছল্লীর সমপরিমাণ নেকী পাবে এবং তার দুই আযানের মধ্যবর্তী সকল (ছগীরা) গুনাহ মাফ করা হবে’। [নাসাঈ, আহমাদ, মিশকাত হা/৬৬৭।]

(৪) ‘আযান ও এক্বামতের ধ্বনি শুনলে শয়তান ছুটে পালিয়ে যায় ও পরে ফিরে আসে’। [বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৬৫৫।]

(৫) যে ব্যক্তি বার বছর যাবৎ আযান দিল, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেল। তার প্রতি আযানের জন্য ৬০ নেকী ও এক্বামতের জন্য ৩০ নেকী লেখা হয়’। [বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৬৫৫।]

(৬) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ইমাম হ’ল (মুছল্লীদের ছালাতের) যামিন ও মুওয়ায্যিন হ’ল (তাদের ছালাতের) আমানতদার। অতঃপর তিনি তাদের জন্য দো‘আ করে বলেন, হে আল্লাহ! তুমি ইমামদের সুপথ প্রদর্শন কর ও মুওয়ায্যিনদের ক্ষমা কর। [আহমাদ, আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৬৬৩।]

আযান দেওয়া একটি অতি সওয়াব পূর্ণ কাজ। আজ আমরা আযান দেওয়া তো দুরের কথা, আযান শুনেও না শুনার চেষ্টা বা ভান করি। ইয়া আল্লাহ, আমাদের তুমি ঈমান দাও যেন আযান শুনে ঘরে বসে না থাকতে পারি, আযান শুনে কোন কাজে ব্যস্ত থাকতে না পারি, আযান শুনে বন্ধুদের সাথে গল্প আড্ডায় ব্যস্ত না থাকি। আসুন আমরা সবাই নামাজ পড়ি এবং আমাদের পরিবারের সবাইকে নামাজ পড়ার আদেশ করি।

আল্লাহুম্মা আমিন।

0 comments:

Post a Comment

 
Copyright © . Al Quran And Sahih Hadis - Posts · Comments
Design by Kaisar Ahmmed