শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
ত্বাহারৎ বা পবিত্রতা
(
الطهارة)
মুছল্লীর জন্য দৈহিক পবিত্রতা অর্জন করা অত্যন্ত যরূরী। কেননা এর ফলে বাহ্যিক পবিত্রতা হাছিলের সাথে সাথে মানসিক প্রশান্তি সৃষ্টি হয়, শয়তানী খেয়াল দূরীভূত হয় এবং মুমিনকে আল্লাহর আনুগত্যের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। ইসলামে দৈহিক পবিত্রতা হাছিলের তিনটি পদ্ধতি রয়েছে- ওযূ, গোসল ও তায়াম্মুম।
(ক) ওযূ ( الوُضوء ) :
আভিধানিক অর্থ স্বচ্ছতা (الوَضاءة)। পারিভাষিক অর্থে পবিত্র পানি দ্বারা শারঈ পদ্ধতিতে হাত, মুখ, পা ধৌত করা ও (ভিজা হাতে) মাথা মাসাহ করাকে ‘ওযূ’ বলে।
ওযূর ফরয : ওযূর মধ্যে ফরয হ’ল চারটি। ১. কুলি করা, নাকে পানি দেওয়া ও ঝাড়া সহ পুরা মুখমন্ডল ভালভাবে ধৌত করা। ২. দুই হাত কনুই সমেত ধৌত করা, ৩. (ভিজা হাতে) কানসহ মাথা মাসাহ করা ও ৪. দুই পা টাখনু সমেত ধৌত করা।
যেমন আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلاَةِ
فَاغْسِلُوْا وُجُوْهَكُمْ وَأَيْدِيْكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ
وَامْسَحُوْا
بِرُءُوْسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ ... (المائدة
6)-
অর্থ : ‘হে বিশ্বাসীগণ! যখন তোমরা ছালাতের জন্য প্রস্ত্তত হও, তখন
তোমাদের মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় কনুই সমেত ধৌত কর এবং তোমাদের মাথা মাসাহ কর ও
পদযুগল টাখনু
সমেত ধৌত কর.....’ (মায়েদাহ ৬)। [সূরায়ে মায়েদাহ মদীনায় অবতীর্ণ হয়। সেকারণে অনেকের ধারণা ওযূ প্রথম
মদীনাতেই ফরয হয়। এটা ঠিক নয়। ইবনু আবদিল বার্র বলেন, মাক্কী জীবনে
রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বিনা ওযূতে কখনোই ছালাত আদায় করেননি। তবে মাদানী
জীবনে অত্র আয়াত নাযিলের মাধ্যমে ওটার ফরযিয়াত ঘোষণা করা হয় মাত্র (দ্র :
ফাৎহুল বারী ‘ওযূ’
অধ্যায় ১/১৩৪ পৃঃ)। যায়েদ বিন হারেছাহ (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)
হ’তে বর্ণনা করেন যে, জিব্রীল প্রথম দিকে যখন তাঁর নিকটে ‘অহি’ নিয়ে আসেন,
তখন তাঁকে ওযূ ও
ছালাত শিক্ষা দেন’...(আহমাদ, ইবনু মাজাহ হা/৪৬২;
দারাকুৎনী, মিশকাত হা/৩৬৬, ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, ‘পেশাব-পায়খানার আদব’
অনুচ্ছেদ-২; সিলসিলা ছহীহাহ
হা/৮৪১)।]অত্র আয়াতে বর্ণিত চারটি ফরয বাদে ওযূর বাকী সবই সুন্নাত।
ওযূর ফযীলত ( فضائل الوضوء) :
(১) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,...... কালো ঘোড়া সমূহের মধ্যে কপাল চিতা ঘোড়া যেভাবে চেনা যায়.. ক্বিয়ামতের দিন আমার উম্মতের ওযূর অঙ্গগুলির ঔজ্জ্বল্য দেখে আমি তাদেরকে অনুরূপভাবে চিনব এবং তাদেরকে হাউয কাওছারের পানি পান করানোর জন্য আগেই পৌঁছে যাব’। [মুসলিম, মিশকাত হা/২৯৮, ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, পরিচ্ছেদ-৩।] ‘অতএব যে চায় সে যেন তার ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে চেষ্টা করে’। [মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৯০।]
(২) তিনি বলেন, ‘আমি কি তোমাদের বলব কোন্ বস্ত্ত দ্বারা আল্লাহ তোমাদের গোনাহ সমূহ অধিকহারে দূর করেন ও সম্মানের স্তর বৃদ্ধি করেন?..... সেটি হ’ল কষ্টের সময় ভালভাবে ওযূ করা, বেশী বেশী মসজিদে যাওয়া ও এক ছালাতের পরে আরেক ছালাতের জন্য অপেক্ষা করা’। [মুসলিম, মিশকাত হা/২৮২।]
(৩) তিনি আরও বলেন, ‘ছালাতের চাবি হ’ল ওযূ’। [আবুদাঊদ, তিরমিযী, দারেমী, মিশকাত হা/৩১২, ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, অনুচ্ছেদ-১।]
(৪) তিনি বলেন, ‘মুসলমান যখন ফরয ছালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে সুন্দরভাবে ওযূ করে এবং পূর্ণ মনোনিবেশ ও ভীতি সহকারে সুষ্ঠুভাবে রুকূ-সিজদা আদায় করে, তখন ঐ ওযূ ও ছালাত তার বিগত সকল গুনাহের কাফফারা হিসাবে গৃহীত হয়। তবে গোনাহে কাবীরাহ ব্যতীত’। [মুসলিম, মিশকাত হা/২৮৬ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, পরিচ্ছেদ-১।] অন্য বর্ণনায় এসেছে, ঐ ব্যক্তি গোনাহ থেকে এমনভাবে মুক্ত হয়, যেমনভাবে তার মা তাকে পরিচ্ছন্নভাবে প্রসব করেছিল। [মুসলিম, মিশকাত হা/১০৪২ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘নিষিদ্ধ ওয়াক্ত সমূহ’ অনুচ্ছেদ-২২।]


0 comments:
Post a Comment